मेरे बारे में

सोमवार, 13 अप्रैल 2020

🔱🙏আলমোড়ার আকর্ষণ :The Charm of Almora : 🔱🙏अल्मोड़ा का आकर्षण 🔱🙏

            ভারতের মানচিত্রে উত্তরপ্রদেশের চেহারাটা দেখলেই মনে হয় , যেন হিমালয়ের পাদদেশে হিমালয় -দুহিতা উমা বা দুর্গার বাহন এক মহাসিংহ। তার শিরোভাগে অবস্থিত জেলাগুলির মধ্যে আলমোড়া যেন চক্ষুস্থান। এক চক্ষুস্মান পুরুষের পাদস্পর্শে পবিত্রীকৃত হয়েছিল আলমোড়া তিনবার। সে পুরুষ পুরুষসিংহ  স্বামী বিবেকানন্দ।  আমরা সে কথায় পরে আসছি।  
          
       দিল্লি থেকে আলমোড়া (৩৭৮ কি.মি.) বাসে যাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় ১২ ঘন্টা। সাধারণত  লোকে লক্ষ্ণৌ হয়ে যায়। লক্ষ্ণৌ থেকে কাঠগোদাম (৩৮৮ কি.মি. ) রাত ভোর রেল যাত্রা। সকালে কাঠগোদাম থেকে বাস , ট্যাক্সি ইত্যাদিতে আলমোড়া (৮৭ কি.মি. খৈরনা হয়ে ) যেতে লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা।  সমুদ্রতল থেকে আলমোড়ার উচ্চতা ৪৯৩৮ ফুট। 

          আলমোড়ার কাছাকাছি কয়েকটি জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রসিদ্ধ। রানীক্ষেত (৫০ কি.মি.) তুষারাবৃত হিমালয়ের দৃশ্য, মিষ্টি বাতাস আর অপূর্ব আবহাওয়ার জন্যে যাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয়।  রানীক্ষেত সমুদ্রতল থেকে ৬০০০ ফুট উচ্চ।   

         কৌশানির ( ৫৩ কি.মি., সমুদ্রতল থেকে ৫৬৭০ ফুট ) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য। ১৯২৯ সালে মহাত্মা গান্ধী এখানে এসে কিছুদিন ছিলেন। এখানের পরিবেশে তিনি গীতা -অনাসক্তি -যোগ- ভাষ্য রচনা করেন। তিনি বলেছিলেন , প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এ স্থানের চেয়ে সেরা আর কোন জায়গা আছে কিনা সন্দেহ। এখানের সূর্যোদয় , সূর্যাস্ত দেখার মত। সূর্যোদয় কালে হিমালয়ের তুষারশুভ্র শৃঙ্গগুলি হয়ে ওঠে টকটক লাল, আর সূযাস্তের সময় সোনার রঙ। 

          একটি অপূর্ব হ্রদকে বেষ্টন করে ছোট পাহাড়ি শহর নৈনিতাল (আলমোড়া থেকে ৬৮ কি.মি. সমুদ্রতল থেকে ৬৮১৪ ফুট ) সকলেরই জানা। হুদের তীরে আর পাহাড়ের উপরের বনরাজির সৌন্দর্য অপূর্ব। হৃদে নৌকাবিহার এখানের এক বিশেষ আকর্ষণ ; যেমন আকাশ পথে তারের দোলায় চূড়ায় উঠে হিমালয় আর হ্রদাদি দর্শন। রাত্রে হরেক ঘরবাড়ি আর রাস্তার আলোর মালা হৃদের লহর কাটা জলে যখন দুলে ওঠে তখন যেন এক ঐন্দ্রজালিক মায়ার সৃষ্টি হয়। এখান থেকে ২৫ কি.মি. -এর মধ্যে মৈনা শৃঙ্গ , ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি দেখতে গিয়ে থাকেন।  

        আলমোড়া থেকে ১২২ কি.মি. দূরে পিথোরাগড় শহর প্রাচীন মন্দির ইত্যাদির জন্যে প্রসিদ্ধ। কুমায়ুন অঞ্চলের প্রাচীন চাঁদ রাজাদের সময়কার বহু দর্শনীয় স্থানের অবশেষে এখানে রয়েছে। এটি যেন একটি ছোটখাট কাশ্মীর। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা ৫৪৪৫ ফুট। পিথোরাগড় থেকে ২০৮ কি.মি. দূরে উত্তর প্রদেশের হিমালয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হিমবাহ মিলাম। শেষের ৫৪ কি.মি. হেঁটে যেতে হয়।        

         আলমোড়া এককালে নাকি ভগবান বিষ্ণুর আবাসস্থল ছিল। স্কন্দ পুরাণে এমন উল্লেখ আছে। কশায়া পাহাড়ের উপর ৫ কি.মি. লম্বা ঘোড়ার জিনের আকারের সরু লম্বা চূড়ায় শহরটি অবস্থিত। প্রায় ১২ কি.মি. এলাকায় এ  শহরের জনবসতি (১৯৮১ -র আদমশুমারি অনুসারে ) ২০, ০০০ এর কিছু বেশি।  গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪.৪ থেকে ২৯.৪ সেলসিয়াস কমে বাড়ে। বৃষ্টিপাত নৈনিতাল , শিমলা, মুসৌরি বা দার্জিলিং -এর তুলনায় কম, গড় ৩৭"। বলা যায় নাতিশীতোষ্ণ , নাতি-আদ্র। খুব স্বাস্থ্যকর জায়গা বলে আলমোড়া বহুকাল প্রসিদ্ধ। এখান থেকে উত্তরে নন্দাদেবী , ত্রিশূল প্রভৃতি প্রায় কুড়িটি হিমালয়ের তুষার ঢাকা শৃঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়। ১৫৯২ খিরষ্টাব্দে চাঁদ রাজাদের রাজধানী হিসাবে এ শহরের পত্তন। এখানের দীর্ঘ বাজার এলাকা পুরানো কালের পাহাড় অঞ্চলের বাজার হিসাবে নাম করা।      

           শহর থেকে ৫ কি.মি. দূরে কালিমঠ। সেখান থেকে সমস্ত শহরটি সুন্দর দেখায়। আর কিছু দূর গেলেই এক পাহাড়ের উপর কাশার দেবীর ও শিবের মন্দির।  ৮ কি.মি. দূরে এ অঞ্চলের বিখ্যাত গল্লু দেবতার মন্দির। জায়গাটার নাম চৈতাই। ইনি এক রাজপুত্র ছিলেন। কিন্তু অলৌকিক শক্তির জন্যে দেবতায় রূপান্তরিত হয়েছেন। সকলের সব অভীষ্ট সিদ্ধ করেন।  ভক্তরা মন্দিরে ঘন্টা দান করেন। ফলে এত ঘন্টা যে মন্দির ও সমস্ত চওরের ঘন্টা গুনে শেষ করা শক্ত।   

        ৩৪ কি.মি. দূরে জগেশ্বর শিবের মন্দির অপূর্ব পরিবেশে বিশাল দেওদার বন আর জটাগঙ্গা নদীর তীরে।  এখানে আর এক শিব আছেন। তাঁর নাম মহামৃত্যুঞ্জয়। তাঁকে বলে বুড়ো শিব , আর জগেশ্বর হলেন বালক শিব। তবে স্থানীয় লোক বলে ইনি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম।   
      
           উত্তর-পূর্বে প্রায় ৮০ কি.মি. বাসে কাপকোট গিয়ে ৫৮ কি.মি. হাঁটা পথে পিন্ডারী হিমবাহ।  এই হিমবাহেই এ অঞ্চলে সবচেয়ে সহজে যাওয়া যায়। 

           শহরের ৩ কি.মি. দূরে এক হরিণক্ষেত্র আছে।  ৩০ কি.মি. দূরে বিন্সারের অরণ্য সৌন্দর্যে সকলেরই মনোহরণ করে। 

             প্রকৃতি ও পর্বতপ্রিয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বার দুই (১৯০৩, ১৯৩১) আলমোড়ায় এসে থেকেছেন এবং তাঁর 'শিশু', 'ছড়ার ছবি ', 'সেঁজুতি '-র অনেকগুলি নিয়ে চল্লিশটির বেশি কবিতা আলমোড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে লেখা।  

          স্বাস্থ্যের আকর্ষণ ছাড়া আলমোড়া কর্ণপ্রয়াগ , রুদ্রপ্রয়াগ , কেদারনাথ , বদ্রীনাথ , গঙ্গোত্রী , যমুনোত্রী , কৈলাশ প্রভৃতি তীর্থে যাবার অন্যতম পথও। শ্রীরামকৃষ্ণের সন্তানদের মধ্যে স্বামী অখণ্ডানন্দ (গঙ্গাধর ) হিমালয় অঞ্চলে ও তিব্বতে অনেক ঘুরেছিলেন। এঁদের মধ্যে তিনিই আলমোড়া প্রথম যান।  শ্রীরামকৃষ্ণের দেহান্তের পর নরেন্দ্রাদি (বিবেকানন্দ প্রমুখ ত্যাগী যুবকগণ) বরাহনগর মঠে থাকছিলেন। কিন্তু ত্যাগ ও তপস্যার (সেবার) প্রবল আকাঙ্ক্ষা তাঁদের  ছিটকে বার করে নিয়ে গেসল ভারতের নানা ক্ষেত্রে।  
           বিবেকানন্দ কয়েকবার এখান ওখান ঘুরে এসে হিমালয়ে এক সাধনার নির্জন স্থান খোঁজ করার উদ্দেশ্যে অখণ্ডানন্দকে সঙ্গী করে কাঠগোদাম হাজির হলেন। একশ বছের আগে বাস বা রাস্তা কিছুই ছিল না। দন্ড-কমণ্ডলু আর ভিক্ষান্ন সম্বল করে বিবেকানন্দ ও খণ্ডানন্দ পাহাড়ি পথে হেঁটে নৈনিতাল পৌঁছলেন। 

         কদিন পর আবার চলা শুরু হল আলমোড়া পথে। বিবেকানন্দ মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট পথ ছেড়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলতে লাগলেন। তৃতীয় দিনে উভয়ে রাত কাটাবার জন্যে একটি মনোরম স্থান দেখতে পেলেন। পথের পাশে দিয়ে বয়ে গেছে কোশি (কৌশিকী) নদী। অসংখ্য ছোট-বড় নুড়ি আর পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী পায়ে হেঁটে পেরিয়ে যাওয়া যায়। অপর দিক থেকে সরোতা নদী এসে পড়েছে কোশির বুকে। মাঝের ত্রিকোণাকৃতি ভূখণ্ড ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে। তার উপর একটি প্রকান্ড পিপুল গাছ। স্বামীজী বললেন , 'কি চমৎকার ধ্যানের জায়গা !' কোশিতে স্নান করে পেরিয়ে বসলেন সেই গাছের নীচে তৎক্ষণাৎ শরীর নিস্পন্দ হয়ে গেল গভীর ধ্যানে। বহুক্ষণ পর ধ্যান ভাঙলে অখন্ডানন্দকে (গঙ্গাধর ) বললেন , "  আজ আমার এক গভীর জিজ্ঞাসার সমাধান হয়ে গেল। প্রথমে শব্দব্রহ্ম ছিল। অনুবিশ্ব আর বৃহৎ -বিশ্ব একই পরিকল্পনানুসারে সৃষ্ট। জীবাত্মা যেমন জীবদেহে , বিশ্বাত্মাও তেমন প্রকৃতিতে অবস্থিত। বাক আর অর্থের মতই এরা অচ্ছেদ্য। ব্রহ্মের এই দুই রূপ সনাতন। কাজেই আমরা যে জগৎ দেখি তা শাশ্বত নিরাকার ও শাশ্বত সাকারের সম্মিলন। "  
   
            এ জায়গাটার নাম কাঁকড়িঘাট , আলমোড়া থেকে ২৩ কি.মি. দূরে। শেষে যখন তাঁরা আলমোড়ার কাছাকাছি (৩ কি.মি.) পৌছেছেন তখন স্বামীজী পথশ্রমে ও প্রচণ্ড ক্ষুধায় অত্যন্ত কাতর।  পা ফোস্কায় ভরে গেছে। প্রায় অজ্ঞান হয় স্বামীজী তখন একখণ্ড পাথরের উপর শুয়ে পড়লেন। অখণ্ডানন্দ দিশেহারা হয়ে কিছু খাবার আর জলের খোঁজ করতে ব্যস্ত হলেন। অনতিদূরেই এক কবরস্থানের পাশে এক কুটরীর কাছে এক মুসলমান ফকিরকে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছে গেলেন। ফকিরের একটি শশা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ফকির নিজেই শশাটি নিয়ে ছুটে এলেন।  কিন্তু বললেন , তিনি মুসলমান। স্বামীজী ক্ষীণকন্ঠে বললেন , ' তাতে কি ? আমরা সবাই কি ভাই নেই ? ' শশাটি খেয়ে স্বামীজীর প্রাণরক্ষা হল। ..... স্বামীজী আমেরিকা থেকে ফিরে দ্বিতীয়বার যখন আলমোড়া যান, আর তাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়, তখন সভাস্থলে ভিড়ের মধ্যে সেই ফকিরটিকে দেখে স্বামীজী ঠিক চিনতে পারেন এবং সভাস্থলে তাঁকে এনে তাঁর দ্বারা তাঁর জীবনরক্ষার কাহিনী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সকলকে শোনান। 

               স্বামীজী প্রথম বার যখন আলমোড়া গিয়ে পৌঁছলেন সেটা ছিল ১৮৯০ সালের আগষ্ট মাসের শেষ বা সেপ্টেম্বরের প্রথম। শহরে পৌঁছেই স্বামী সারদানন্দ ও কৃপানন্দের (বৈকুন্ঠ নাথ সান্যাল ) সঙ্গে স্বামীজী ও অখণ্ডানন্দের দেখা হল। তাঁরা স্বামীজীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলমোড়ায় অপেক্ষা করছিলেন। সকলেই শহরের এক অতি সজ্জন ব্যক্তি , ধনী হলেও ধনলাভের কালিমা যাঁকে স্পর্শ করেনি --লালা বদ্রি শা'র বাড়িতে উঠলেন। 

        ১৮৮৯ সালে যখন স্বামীজী আলমোড়া যাবার কথা ভাবছিলেন , তখন বদ্রীনাথ থেকে অখণ্ডানন্দ বদ্রি শা'কে স্বামীজীর পরিচয় দিয়ে তাঁর আলমোড়ায় যাবার ইচ্ছার কথা জানান।  স্বামী বিবেকানন্দের পরিচয় দিতে গিয়ে অখণ্ডানন্দ সে চিঠিতে লিখেছিলেন যে , বিবেকানন্দ শুধু উচ্চ শিক্ষিত নন , ঈশ্বরের জন্যে যথার্থই সর্বস্ব ত্যাগ করে তিনি কঠোর সন্ন্যাস-জীবন যাপন করেন এবং তিনি 'পরমহংস ' পর্যায়ের এক উচ্চকোটি সন্ন্যাসী। 

            শ্রী রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে থাকা কালেই বিবেকানন্দ (নরেন্দ্র ) সমাধি আস্বাদ করেছিলেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যাতে তিনি সেই ব্রহ্মাস্বাদেই ডুবে থাকতে পারেন।  কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ চেয়েছিলেন নরেন লোককল্যানের জন্যে উচ্চ ভূমিতেই না থেকে মানুষের মাঝে নেমে আসুক। যেন অলৌকিক ভাবেই তা ঘটেছিল আর সে বিষয়ে স্বামীজীর আলমোড়ায় অবস্থান স্মরণীয় হয় থাকবে।   

          লালা বদ্রীর শা'র আতিথেয়তায় কোন ত্রূটি ছিল না। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের মন ছটপট করছিল অন্য কিছুর জন্যে, নির্জনতার জন্যে , গভীরতর আধ্যাত্মিক উপলব্ধির জন্যে। তিনি একাকী বেরিয়ে পড়লেন। ......কাশার দেবী পাহাড়ের এক গুহায় চলল নিরবচ্ছিন্ন দিনরাত্রি কঠোর তপস্যা। একান্ত নির্জনতায় , নৈঃশব্দে ধীরে ধীরে তাঁর মুখমন্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠলো এক দিব্য আলোকে , চূড়ান্ত সত্যের প্রভায়। যেন বুঝলেন শ্রীরামকৃষ্ণের 'জ্ঞানের পরে বিজ্ঞান ' কথার অর্থশুধু ব্রহ্মজ্ঞানে ডুবে থাকা নয়। ....' তিনিই সব হয়েছেন'--- জেনে সর্বজীবের কল্যাণই শেষ কথা।  নরেনের বিষয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের ইচ্ছা-বীজ অঙ্কুরিত হল বিবেকানন্দের অপরোক্ষ অনুভূতির প্রত্যয়ে।  

        আলমোড়ায় ফিরেই খেলেন সেই জগতের এক ধাক্কা। ভগিনীর উদ্বন্ধনে জীবনান্তের সকরুণ সংবাদ। চার সন্ন্যাসী মিলেরওনা হলেন বদ্রীনাথের পথে । কিন্তু প্রায় দু'শ কিলোমিটার হাঁটার পর একের পর একজন অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলেন।  অগত্যা কিছু নেমে সাধু-সন্তদের প্রিয় হৃষিকেশে পৌঁছলেন , যেখানে 'হর হর' রবে হিমালয়ের উপর থেকে বয়ে গঙ্গা ভারতের সমতলে উপনীত হচ্ছে। কিছুদিন পর মীরাট থেকে আবার নিঃসঙ্গ একাকী পরিব্রাজক ভারত -পথিক , সে ভারতকে চিনতে যার সেবার জন্যেই  তাঁর জন্মগ্রহণ। কত অঘটন ঘটে গেল ! নীলাম্বুরাশি পেরিয়ে আমেরিকার আকাশে ক্যালঝ্ঞ্ঝার মাঝে বজ্রের মত ফেটে পড়লেন।  হেয় ম্লানমুখী ভারত আবার জগতের সামনে আপন প্রভায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠলো।     

          বিশ্ববন্দিত বিবেকানন্দ ১৮৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে ফিরলেন। সিংহল থেকে শুরু হল দেশজুড়ে অগণিত দেশবাসীর অকুন্ঠ অভিনন্দন আর প্রত্যুত্তরে ' ভারতে বিবেকানন্দ ' বিধৃত স্বামীজীর অনবদ্য বক্ত্রতামালায় ক্লিষ্ট খিন্ন নিদ্রিত ভারতবাসীর জন্যে হৃদয় ঢালা ভালবাসা দিয়ে ভরা অনন্য জাগানিয়া গান ! ক'বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে দার্জিলিং -এ কিছুদিন কাটিয়ে পূর্ন স্বাস্থ্যোদ্ধার মানসে আবার আলমোড়া যেতে চাইলেন। ....ইতোমধ্যে কলকাতায় ১ লা মে ১৮৯৭ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা হল। ৬ ই মে আলমোড়ার দিকে পা বাড়ালেন।  আসল উদ্দেশ্য কিন্তু হিমালয় অঞ্চলে একটি আশ্রম স্থাপন ,' যেখানে কাজই প্রাধান্য পাবে না, প্রাধান্য পাবে শান্ত সমাহিত ভাব আর ধ্যানের গভীরতা। ' 

         এবারে সবকিছুই অন্য রকম।  স্বামীজীর বাণীর শ্রুতিলেখক গুডউইন এবং অন্যরা এসেছেন কাঠগোদামে আলমোড়া থেকে। স্বামীজী ঘোড়ার পিঠে পাহাড় চড়বেন, সঙ্গে থাকবেন গুডউইন। আলমোড়ার কাছাকাছি রাস্তায় বহু লোক অপেক্ষা করছিল। স্বামীজিকে একটি সুসজ্জিত ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যেতে লাগল বাকী পথ। পথের পাশের বাড়ী থেকে গৃহবধূরা মাঙ্গলিক পুষ্পাক্ষত বৃষ্টি করতে লাগলেন। লালা বদ্রি শা'র বাড়ীর সামনে প্রকাণ্ড সামিয়ানা টাঙান হয়েছে। প্রায় তিন হাজার লোক সেখানে সমবেত।  তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। দুধারের বাড়ীর আলোক-সজ্জায় চারদিক আলোকিত।  

          অভ্যর্থনা সমিতির পক্ষ থেকে পণ্ডিত জ্বালাদত্ত জোশি হিন্দিতে একটি সংক্ষিপ্ত অভিনন্দন পাঠ করলেন। তাতে তাঁর পাশ্চাত্ত্যে আধ্যাত্মিক বিজয়ের উল্লেখ করে বলা হল, 'আপনি কৃতার্থ , আপনার পরম শ্রদ্ধেয় গুরুদেব গৌরবান্বিত , আর ভারতভূমি ধন্য।' স্বামীজীর হিমালয়ে আশ্রমপ্রতিষ্ঠার ইচ্ছায় কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ' শঙ্করাচার্যও হিমালয়ে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  আপনার কল্পিত আশ্রম কুমায়ুনীদের অশেষ কল্যাণ করবে। ' এর পর লালা বদ্রি শাহ খুলঘরিয়ার পক্ষ থেকে একটি ইংরেজি ভাষণ পাঠ করেন পণ্ডিত হরিরাম পাণ্ডে। অপর এক পণ্ডিত সংস্কৃতে একটি অভিনন্দন পাঠ করেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে দিন স্বামী বিবেকানন্দ ইংরেজিতে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণে অভিনন্দনের উত্তর দেন। তিনি বলেন , ' এই সেই পবিত্র ভূমি , সেখানে ভারতের প্রত্যেক যথার্থ সত্যপিপাসু ব্যক্তি জীবন-সন্ধ্যায় আসিয়া শেষ অধ্যায় সমাপ্ত করিতে অভিলাষী হয়। এই পবিত্রভূমির গিরিশখরে , গভীর গহবরে, দ্রুতগামিনী স্রোতস্বতীসমূহের তীব্র সেই অপূর্ব তত্ত্বগুলির কণামাত্র বৈদেশিকগনের নিকট হইতেও গভীর শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়াছে এবং যেগুলিকে যোগ্যতম বিচারকগণ অতুলনীয় বলিয়া নিজেদের মত প্রকাশ করিয়াছেন। আমার প্রাণের বাসনা এই পর্বতরাজের ক্রোড়ে আমার শেষ দিনগুলি কাটাইবে। ' তিনি আরও বলেন , ' ভবিষ্যতে পৃথিবীর সর্বস্থানে হইতে বীরহৃদয় ব্যাক্তিগন এই শৈলরাজের দিকে আকৃষ্ট হইবেন - যখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরোধ ও মতপার্থক্য লোকের স্মৃতিপথ হইতে অন্তর্হিত হইবে , যখন তোমার ধর্মে ও আমার ধর্মে যে বিবাদ তাহা একেবারে অন্তর্হিত হইবে।'   

          এবারে তিনি আলমোড়ায় প্রায় তিন মাস কাটান। তার মধ্যে অবশ্য শরীর ভাল বোধ না হওয়ায় দুবারে প্রায় একমাস ৩২ কি.মি. দূরে দেউলধরে লালা বদ্রি শা'র এক বাগানবাড়িতে থেকে আসেন।  সেখানে ফল দুষ খেয়ে আর প্রচুর ঘোড়ায় চড়ে তাঁর শরীর বেশ লাগতে লাগলো।     

            এসময় স্বামীজীর বেশ ক'জন গুরুভাই এবং অনুরক্তরা আলমোড়ায় এসেছিলেন। স্বামী শিবানন্দ (মহাপুরুষ মহারাজ) সাড়ে তিন কি.মি. দূরে পাতাল দেবীতে ধ্যান করে কাটাতেন।  মাঝে মাঝে স্বামীজীর সঙ্গে দেখা হোত, স্বামীজী ওখান থেকেই তাঁকে সিংহল পাঠিয়ে দিলেন।  সিংহলে রামকৃষ্ণ মিশনের কেন্দ্র স্থাপন করে কিছু দিন থেকে তিনি মঠ ফেরেন। ইতোমধ্যে আলমবাজার থেকে বেলুড়ে নীলাম্বর মুখুজ্জের বাড়িতে মঠ স্থানান্তরিত হয়েছে। মিশন স্থাপনের ক'দিনের মধ্যেই স্বামীজী কলকাতা থেকে চলে এসেছিলেন। কিছু ত্রাণের কাজও শুরু করে এসেছিলেন। কাজেই  আলমোড়া থেকেই তাঁকে এ সব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশ দিতে হচ্ছিল।
               
            তা ছাড়া বহু জিজ্ঞাসু নানা প্রশ্ন নিয়ে হাজির হোত। দীর্ঘ আলোচনা চলতো। বিদেশী ভক্তরাও যতটা পারা যায় তাঁর সঙ্গ করতে চাইতেন।  সব চিঠিতে নানা প্রশ্ন বা নির্দেশ প্রার্থনা থাকত। প্রচুর দীর্ঘ চিঠিও ক্রমাগত লিখতে হোত। শিষ্য শরৎ চক্রবর্তীকে লিখছেন , 'আমাদের দয়া নয় , প্রেম। সকলের মধ্যে আত্মদর্শন। ' স্বামী ব্রহ্মানন্দ (রাখাল ) -কে লিখছেন , ' আমাদের সঙ্ঘের  উদ্দেশ্যের যে ছাপা বয়ান পাঠিয়েছিলে , তা সংশোধন করে পাঠালাম। ' এও চলছে আলমোড়া থেকে। আবার লিখছেন , 'প্রভুর পুজোর খরচ মাসে এক টাকায় চালাও। প্রভুর সন্তানেরা অনাহারে মরছে। ' 'কলকাতার সভার উদবৃত্ত দুর্ভিক্ষ -ত্রানে পাঠাও বা বস্তিবাসীদের সেবায় লাগাও। স্মৃতি- মন্দির বা ও সব এখন চুলোয় যাক। ' কাউকে লিখছেন , ' যারা নিঃসন্তান তাদের অনেকে যেমন বেরাল পোষে, আমার যেন সেই অবস্থা। আমার যেন পুরুষের চেয়ে নারীর ভাব বেশি। অন্যের যত দুঃখকষ্ট নিজের বুকে টেনে আনি। ' 

           ইংরেজি ও বাংলা ছাড়া এর মধ্যে আবার কিছু চিঠি সংস্কৃতে লিখতেন। একটিতে লিখছেন ,  'অহমধুনা আলমোড়া নগরস্যা কিঞ্চিৎ উত্তর কশ্চিদ বণিজ উপবনোপদেশে নিবসামি। ' এ চিঠিতে কিন্তু একটি মূল্যবান বস্তু ছিল। স্বামী শ্রদ্ধানন্দের প্রশ্নের উত্তরে স্বামীজী গীতার একটি শ্লোকের (২ য় অধ্যায় সংখ্যযোগের ৪৬ ) এক অপূর্ব ভাষ্য লেখেন।  

          আলমোড়া থেকেই স্বামী অখণ্ডানন্দের সেবার কাজে উৎসাহ দিয়ে লিখছেন , 'কার নাম -কিসের নাম ? কে নাম চায় ? দূর কর নাম।  ক্ষুধিতের পেটে অন্ন পৌঁছাতে যদি নাম ধাম সব রসাতল যায় আহভাগ্যম মহাভাগ্যম। ' সারগাছিতে সেই কাজের সূত্রপাত। এদিকে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ (শশী মহারাজ ) কে মাদ্রাজে পাঠিয়েছেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।  

       আলমোড়া থেকে স্বামীজী চলে যাবেন জানতে পেরে স্থানীয় লোকেরা স্বামীজীর কিছু ভাষণ শোনবার জন্যে উদগ্রীব হয়ে উঠলো।  স্থানীয় ইংরেজ বাসিন্দারা পাশ্চাত্যে স্বামীজীর বাগ্মিতার কথা শুনেছিলেন। তাঁরাও ইংলিশ ক্লাবে (বর্তমান অফিসার্স মেস ) একটি বক্ততার আয়োজন করলেন। ২৭ জুলাই স্বামীজী জেলা স্কুলে (বর্তমান রাজকীয় ইন্টার কলেজ) হিন্দিতে ভাষণ দিলেন। পূর্বে কখন হিন্দিতে বললেও একটি কঠিন বিষয়ের উপর আরগর্ভ ভাষণ স্বামীজীর এই আলমোড়াতেই প্রথম। স্বামীজী একখানি চিঠিতে নিজে তা উল্লেখ করেছিলেন।  স্বামীজীর বক্ত্রিতা হিন্দি ভাষাকে নতুন মর্যাদা দিয়েছিল এবং শ্রোতাদের মধ্যে হিন্দিভাষী পণ্ডিতরা মন্তব্য করেছিলেন , এ ভাষণ শুনে তাঁদের মনে হয়েছে যে , হিন্দিতেও বাগ্মি  তা সম্ভব।
           সে সভায় বিষয় ছিল ' তত্বে ও প্রয়োগে বেদের শিক্ষা। ' প্রায় ৪০০ লোক মুগ্ধ হয়ে শুনেছিল যখন স্বামীজী কঠিন বিষয়টি প্রকাশের প্রয়াসে হিন্দিতে স্বতঃ নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি করে বলে যাচ্ছিলেন। হিন্দিভাষীদের মধ্যে পণ্ডিতরা হিন্দিকে তেমন সুনজরে দেখতেন না। বাঙালি পণ্ডিত মধুসূদন সরস্বতী তুলসীদাসের 'রামচরিতমানসে'র প্রতি শ্রদ্ধা জাগান।  কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে বিগত শতাব্দীতে প্রথম হিন্দি গদ্য রচনা ও পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা হয়। এই পশ্চাদ পটে স্বামীজীর এ হিন্দি ভাষণের মূল্য আনেক। 
 
         ২৮ এ জুলাই ইংলিশ ক্লাবের বক্তৃতা সম্বন্ধে শ্রীমতি হেনরিয়েটা মুলর লিখেছিলেন , ' সময় সময় মনে হচ্ছিল 'আমি' নেই , 'তুমি' নেই , 'এ ' নেই , 'ও ' নেই , বক্তা , তাঁর বাণী আর শ্রোতা সব সেই আত্মবস্তুতে লীন হয়ে গেছে। ৩১ এ জুলাই জেলা স্কুলে আর একটি বক্তৃতাও ইংরেজিতে হয়েছিল। তবে সে বিষয়ে বিশেষ কিছু লিপিবদ্ধ নেই। 

         সম্ভবতঃ এ বারেই আর একটি ছোট হলেও স্মরণীয় ঘটনা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে আসা। তিনি আসতেই দেখলেন ঘোড়ায় চড়ে এক সন্ন্যাসী ফিরলেন আর এক সাহেব ঘোড়াটিকে যথাস্থানে নিয়ে গেলেন। স্বামীজী (ঘোড়ায় চড়া সন্ন্যাসীও) ততক্ষনে ভেতরে ঢুকেছেন। অশ্বিনী কুমার এক নবীন সাধুকে জিজ্ঞাসা করলেন , ' নরেন দত্ত আছেন ?' তিনি উত্তর দিলেন , ' নরেন দত্ত বলে এখানে কেউ নেই। তিনি অনেক দিন মারা গেছেন। ' অশ্বিনী কুমার অপ্রতিভ এবং ব্যথিত হলেন।  কিন্তু ততক্ষনে স্বামীজী ভেতর থেকে এ সব কথা শুনে তাঁকে ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন এবং সাদর অভ্যর্থনা করে আগের বার বেশি কথা বলতে পারেন নি বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন। ..... সে কত দিনের কথা ! শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে নরেনের সঙ্গে পরিচয় করতে বলেছিলেন। কিন্তু স্বামীজী অসুস্থ থাকায় বেশি কথা হয় নি। এত কাল পরে স্বামীজীর তাঁকে চিনতে কোন অসুবিধা হয় নি। অশ্বিনী কুমার শিক্ষাব্রতী বলে তাঁকে বলেছিলেন , ' এই তো কাজ।  ছাত্রদের বজ্রের মত দৃঢ় চরিত্র গঠন করতে হবে। সমস্ত জাতিকে জাগাতে হবে। সভা-সমিতিতে প্রস্তাব পাশ করে দেশের স্বাধীনতা আসবে না। ' 

        আলমোড়া ত্যাগ করে স্বামীজী উত্তর ভারতের নানা স্থান - কাশ্মীর, পাঞ্জাব , রাজস্থান ইত্যাদি ঘুরে সারা ভারত কে জেগে ওঠার মন্ত্র শোনালেন। পরে কলকাতায় ফিরে স্বাস্থ্যের জন্যে দার্জিলিং গেলেন। ফিরেই কলকাতায় প্লেগ নিবারনের কাজে নেমে পড়লেন। অবস্থার কিছু উন্নতি হলে, ক্যাপ্টেন ও শ্রীমতি সেভিয়র স্বামীজীর পরিকল্পিত হিমালয় অঞ্চলে আশ্রমের জন্যে স্থান সন্ধানসূত্রে আলমোড়ায় থাকতে স্বামীজিকে সেখানে যেতে অনুরোধ করলেন।  

         ক্ষেত্রীর মহারাজও তখন নৈনিতালে ছিলেন। তিনিও স্বামীজিকে নিমন্ত্রণ করলেন। কাজেই তৃতীয় বারের জন্য স্বামীজী আবার আলমোড়ার দিকে রওনা হলেন ১৮৯৮ সালের মে মাসে।  এবার সঙ্গে ছিলেন গুরুভাই স্বামী তুরীয়ানন্দে ও স্বামী নিরঞ্জনানন্দ , স্বীয় শিষ্যদ্বয় স্বামী সদানন্দ ও স্বামী স্বরূপানন্দ এবং শ্রীমতি ওলিবুল, শ্রীমতি মাইকলিওড , ভগিনী নিবেদিতা ও কলকাতাস্থ আমেরিকার কনসাল-জেনারেলের স্ত্রী শ্রীমতি পাইটর্সন। নৈনিতালে স্বামীজীর সঙ্গে মহম্মদ সর্ফরাজ হোসেন নামীয় এক ভদ্রলোকের পরিচয় হয়। তিনি স্বামীজীর আধ্যাত্মিকতা এবং ব্যক্তিত্বে এতেই আকৃষ্ট হন যে তিনি বলেন , ভবিষ্যতে যদি স্বামীজিকে কেউ অবতার বা ভগবানের এক বিশেষ প্রকাশ বলে দাবি করে, তবে প্রথমেই তিনি সেই ব্যক্তি হবেন।  

              এবারে স্বামীজী আলমোড়ায় সেভিয়ার দম্পতির অতিথি হিসাবে তাঁদের ভাড়া নেওয়া বাড়িতে থাকলেন।  সেটিও তখন লালা বদ্রি শা'র বাড়ি ছিল।  এর একদিকের বারান্দায় এখনও স্বামীজীর একটি পুরানো ছবি প্রলম্বিত আছে। নিবেদিতা এবং অন্যান্য পাশ্চত্য মহিলারা রইলেন আর একটি বাড়িতে , যেটি 'ওকলে হাউস' নাম পরিচিত। স্বামীজী রোজ খুব সকালে প্রাতভ্রমন সেরে ' ওকলে হাউস' আসতেন এবং প্রাতরাশের সঙ্গে চলতো কয়েক ঘন্টা সকলের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা। অনুরক্ত এবং আগন্তুক ব্যক্তিদের সঙ্গে ক্রমাগত কথা, অসংখ্য চিঠি লেখা এবং কোলাহলের মধ্যে স্বামীজীর দেহ ও মন ক্রমাগতই নির্জন ধ্যানের শান্তি চাইছিল। নিবেদিতার মনেও কিছু দ্বন্দ্ব তাঁকে কাতর করেছিল, এবং স্বামীজীর বিশ্রাম তিনি কামনা করছিলেন। 

        আলমোড়ার আর একটি বিশেষ ঘটনা এই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে গেল। একদিন সন্ধ্যায় স্বামীজী অপ্রত্যাশিতভাবে 'ওকলে হাউস ' এলেন। নিবেদিতা ও অন্যান্যরা বারান্দায় বসেছিলেন।  স্বামীজী নিবেদিতা কে বললেন , 'আজ অমাবস্যা ! মুসলমানরা   অমাবস্যা মানে। আমি আবার বনের দিকে যাচ্ছি , যখন ফিরবে শান্তি নিয়ে আসবে। ' বলে নিবেদিতাকে আশীর্বাদ করলেন।  নিবেদিতার মনে পড়ল শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন , একদিন এমন হবে যে নরনের স্পর্শে লোকের জ্ঞানোদয় হবে। নিবেদিতার আজ সেই দিন। তিনি সে দিন যথার্থ গুরু পেলেন , যিনি ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। গভীর ধ্যানে নিবেদিতা অনাস্বাদিত অনুভূতি লাভ করলেন। 

           পরের দিন ভোরে স্বামীজী সিয়া দেবী পাহাড়ে (৪৫ কি.মি.  ) চলে গেলেন।  তিন দিন তিন রাত ধ্যানের পর (২৮ এ মে ) যখন স্বামীজী ফিরলেন তখন 'টমসন হাউসে' র সামনে নিবেদিতা প্রভৃতি সকলেই উপস্থিত ছিলেন। উজ্জ্বল মুখে স্বামীজী বললেন , তিনি এখনও সেই আগের নগ্নপদ সন্ন্যাসী , যে শীত- গ্রীষ্মের দাস নয় , পশ্চিম জগৎ যার কোন ক্ষতিই করতে পারে নি।    

         এবার আলমোড়া থাকার সময় (প্রায় এক মাস ) শ্রীমতি এনি বসন্তের সঙ্গে স্বামীজীর দুবার সাক্ষাৎ হয়। আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, স্বামীজীর প্রেরণায় মাদ্রাজে যে ইংরেজি পত্রিকা ' প্রবুদ্ধ ভারত ' শুরু হয়ে অল্প দিন পরেই সম্পদকের মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে যায়, তা ক্যাপ্টন সেভিয়েরের সোৎসাহে সহযোগিতায় প্রেস খুলে আলমোড়া থেকে প্রকাশিত হতে থাকে , স্বামী স্বরূপানন্দের সম্পাদনায়। সেভিয়র ও স্বামীজী নিজেও ঘুরে যখন আলমোড়ার কাছাকাছি কল্পিত আশ্রমের জায়গা পাওয়া গেল না এবং পরে যখন প্রায় ৯০ কি.মি. দূরে মায়াবতীতে অদ্বৈত আশ্রম স্থাপিত হল তখন ১৯৯৯ সালে 'প্রবুদ্ধ ভারতের ' কার্যালয় সেখানে স্থানান্তরিত হয়। 

         আগেও যা দেখেছি , স্বামীজী যতবার হিমালয়ের নিভৃত কন্দরে লুকোতে চেয়েছেন , এ তাপদগ্ধ পৃথিবী ততবার তাঁকে কঠোরভাবেই আকর্ষণ করেছে। ৩০ এ মে স্বামীজী সেভিয়রদের সঙ্গে আশ্রমের জায়গার খোঁজে কিছু দূরে গিয়েছিলেন। ৫ ই জুন ফিরে দুঃসংবাদ পেলেন। পাওহারি বাবা গত হয়েছেন। আর তাঁর প্রিয় শ্রুতিলেখক জোসিয়া গুডউইন  যাঁর অসাধারন ত্যাগ , নিষ্ঠা ও দীর্ঘ পরিশ্রমের জন্যে আজ আমরা স্বামীজীর অমূল্য বাণী-সংগ্রহ পাচ্ছি , উটকামণ্ডে লোকান্তরিত হয়েছেন।  স্বামীজী অনেকক্ষন স্তব্ধ হয়ে থেকে বলেছিলেন , ' আমার সাধারনের কাছে বলার দিন শেষ হয়েছে। তার কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য। কেউ যদি আমার কোন ভাব থেকে কিছু লাভবান হয়ে থাকে , তার জানা উচিত যে, আমার প্রত্যেকটি কথা ধরে রাখার পেছনে গুডওইনের (যাঁকে স্বামীজী 'গুরুদাস ' বলতেন) অক্লান্ত ও নিঃস্বার্থ প্রয়াসই দায়ী। ' 

        এবার স্বামীজী যে সব আলোচনা করেছিলেন তার অনেক কিছুই নিবেদিতা তাঁর 'স্বামীজীর সহিত হিমালয় ' ও 'স্বামীজীকে যেমন দেখিয়াছি ' গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। আধ্যাত্মিক বিষয় ছাড়াও তাঁর আলোচনায় ভারতের জাতীয় চেতনার জাগরণ , সাধারনের সার্বিক উন্নতি ও স্বাধীনতার স্বপ্নও বার বার আসত, যেমন অশ্বিনী কুমারের সঙ্গে আলোচনায় দেখা গেছে।  

        বিদেশ থেকে স্বামীজী ভারতের ভাবসাগরের ঢেউ এমন উত্তাল করে তুলেছিলেন যে, ইংরেজ সরকারের গোয়েন্দারা তাঁর গতিবিধির উপর নজর রাখতে। ইংলণ্ডে নিবেদিতা একজনকে লিখতে গিয়ে একখানা চিঠিতে লিখেছিলেন, ' পৌরুষ কোন বাধা মানে না। স্বামীজী এসব কথা শুনে হাসেন।  সরকার যদি স্বামীজীর বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে যায় , তা পাগলামি হবে। কারন সারাদেশ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ওঠবে।  একজন গভীর স্বদেশানুরাগিণী ইংরেজ মহিলা হয়ে আমিতো প্রথম ওঠে দাঁড়াব। '  

        ভক্তদের নিয়ে স্বামীজী ১১ ই জুন ১৮৯৮ আলমোড়া থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।  ক্ষীরভবানী , অমরনাথ প্রভৃতি দর্শন করে আবার ফিরে গেলেন সমতলের সর্বমাবের মাঝে এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে।  হিমালয়ের আকর্ষণ থেকে আবার ফিরে যেতে হওয়ায় একটা ক্ষোভ হল এবং তা গিয়ে শেষ অবধি পড়ল তাঁর 'গুরুদেব , আচার্য, জীবনের আদর্শ, ইষ্ট, প্রাণের দেবতা ' শ্রীরামকৃষ্ণনের উপর। মা সারদা শুনে বললেন , ' কি করবে বল, বাছা , তোমার টিকি যে তাঁর কাছে বাঁধা। '   

        স্বামীজীর পরিকল্পিত অদ্বৈত ভাবে সাধনার ক্ষেত্র হিসাবে হিমালয় অঞ্চলে আশ্রম স্থাপন উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় আলমোড়ার কাছাকাছি সম্ভব হয় নি। কিন্তু  ক্যাপ্টন  সেভিয়রের আপ্রাণ চেষ্টায় মায়াবতীতে সে আশ্রম গড়ে ওঠেছিল। সেভিয়ার সত্যিই আশ্রমের জন্যে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁর সেখানেই মৃত্যু হয় এবং অনতিদূরস্থ ছোট পাহাড়ি নদীর ধারে তাঁর শরীরের অগ্নি-সংস্কার হয়।  

      স্বামীজী দ্বিতীয় বার বিদেশে গিয়েছিলেন। সে আশ্রমে তাঁর যাওয়া হয়নি।  আমেরিকা , ইউরোপ ও আফ্রিকা ঘুরে স্বামীজী বোম্বাই -এ নেবেই ক্যাপ্টেন সেভিয়রের খবর নিতে গিয়ে জানলেন , মাত্র ক'দিন আগেই তাঁর দেহান্ত হয়েছে। 

       স্বামীজী বেলুড়ে ফিরেই মায়াবতীর  যাবার উদ্যোগ করলেন। যথেষ্ট আগে মায়াবতীতে সে খবর না দিতে পারায় ভাবলেন , মায়াবতীর কাউকে কাঠগোদামে না পেলে আলমোড়া হয় যাবেন।  তাই লালা বদ্রী শা কে তার করলেন। কাঠগোদাম পৌঁছে দেখলেন , স্বামী বিরজানান্দ (কালীকৃষ্ণ ) মায়াবতী থেকে ডান্ডি নিয়ে যাবার জন্যে পাঠিয়েছেন। এদিকে বদ্রী শা লালা গোবিন্দলাল শা কে আলমোড়া নিয়ে যাবার জন্যে পাঠিয়েছেন।   এবার স্বামীজীর সঙ্গে স্বামী শিবানন্দ এবং স্বামী সদানন্দ ছিলেন।  

      কালীকৃষ্ণ ও স্বামী শিবানন্দের পরামর্শে আলমোড়ায় গেলে আটকে পড়তে হবে অথচ মায়াবতী শীঘ্রই যাওয়া প্রয়োজন বলে , আলমোড়া না গিয়ে সোজা পথে তাঁরা মায়াবতী রওনা হলেন (৩০ সে ডিসেম্বর ১৯০০। ) কিন্তু গোবিন্দলাল তাঁদের সঙ্গ ছাড়লেন না। 

      ফেরার পথে অন্তত যাতে স্বামীজীকে আলমোড়ায় আনা যায় এই ভেবে। অবশ্য তা আর হয়ে ওঠে নি। পথে সকলকেই দ্বিতীয়দিনে খুবই কষ্ট পেতে হয় বৃষ্টি ও তুষার পাটের জন্যে। তবু ১ লা জানুয়ারি ১৯০১ মৌরনালার ডাকবাংলোয় আলমোড়ার আতিথেয়তা গোবিন্দলালের মাধ্যমে স্বামীজী গ্রহণ করেছিলেন

    আলমোড়ার পর্বতশিখরের পশ্চিম প্রান্তে (ব্রাইট এন্ড কর্নার ) পাহাড়ের ঢালে ১৯১৮ সালে স্বামী তুরীয়ানন্দ 'রামকৃষ্ণ কুটীর ' নামে একটি আশ্রম স্থাপন করেন। এখান থেকে সিয়াদেবী পাহাড়টি অপূর্ব দেখায়।  সেখানে পুরুষসিংহ স্বামী বিবেকানন্দ দীর্ঘ তপস্যা করেছিলেন। পাহাড়টির চূড়ায় কিছু গাছপালা দীর্ঘকাল এমনভাবে আছে দেখলে মনে হয় যেন একটি সিংহ।   

       সামনে কোশী নদীটি এঁকে বেঁকে চলে গেছে দীর্ঘপথ। অনতিদূরে কিছু নীচে একটি পুরান বাড়ি আজও দাঁড়িয়ে আছে।  লালা বদ্রী শা'দেরই 'চিলকাপেট হাউস। ' স্বামী তুরিয়ানন্দ আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর চলে এসেছিলেন আলমোড়ায় এবং স্বামী শিবানন্দের সঙ্গে এ বাড়িতে থাকতেন ও কঠোর তপস্যায় কালাতিপাত করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের বহু স্মৃতিবিজড়িত আলমোড়ায় আশ্রমটি একটি তীর্থ-কেন্দ্র হয়ে ওঠেছে। সাধু, ভক্ত যাঁরাই এখানে আসেন স্বতঃই তাঁদের মন অন্তর্মুখ হয়ে যায়। 

         কাছেই রয়েছে 'বিবেকানন্দ গবেষণাগার। ' স্বামীজীর প্রথম শিষ্য স্বামী সদানন্দের শিষ্য- ' বশী সেন' স্বামী বিবেকানন্দের ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষি-নির্ভর ভারতের সাধারনের সেবার উদ্দেশ্যে উদ্ভিদ শারীরবৃত্ত ও কৃষি বিষয়ে গবেষণার জন্যে এটি শুরু করে ছিলেন। ভারতবর্ষে এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এটিই ছিল অগ্রণী। 

         আশ্রম থেকে প্রায় তিন কিলোমিটর দূরে আলমোড়ায় প্রথম বার আসবার সময় পথশ্রমে ও অনাহারে ক্লান্ত হয়ে স্বামীজী যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানে এখন 'স্বামী বিবেকানন্দ স্মৃতি বিশ্রামাগার' তৈরি হয়েছে। ১৯৭১ সালে ৪ ঠা জুলাই এর উদ্বোধন হয়। এতদঞ্চলে স্বামীজীর স্মারক হিসাবে এটি একক। এর পাশ দিয়েই এখন চমৎকার বাস রাস্তা। রৌদ্র বর্ষা তুষারপাতে যাত্রীরা এখানে আশ্রয় পেতে পারে আর স্বামীজীর অনুধ্যানে মগ্ন হতে পারে।  

         পাশেই সেই প্রস্তরখন্ড আর অনতিদূরে কবরস্থানের পাশে সেই ফকিরের আস্তানাটি দেখা যায়। বিশ্রামাগারের জলের কলটিই এখানে পানীয়ের একমাত্র উৎস।  হলটি চারপাশ খোলা।  দূরে হিমালয়ের শুভ্র শৃঙ্গরাজি।  চারিদিকে পাকা টবে নানা ফুল , চারদিক দিয়ে লতানে ফুলের গাছ উপরে ওঠেছে। আমেরিকান শিল্পী আর্ল ক্রিস্টারের আঁকা স্বামীজীর একটি কল্পনাকৃতি উপর থেকে নেমে আসা জাফরির গায়ে প্রলম্বিত।  ঢুকতেই তা ধ্যানসিদ্ধ স্বামীজীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

         পশ্চাৎপটে  চিত্রিত আছে শিবালয় হিমালয়ের মানস সরোবর আর কৈলাশ।  তিন দিকে যাত্রীদের বসার জন্যে গাঁথা বেঞ্চি আছে। থামগুলিতে কাচের নীচে স্বামীজীর দশটি বাণী ইংরেজি , হিন্দি ও উর্দুতে খোদিত আছে। এতে আছে সেবা, কর্ম , ধর্ম , আদর্শ , ঐক্য , বিস্বাস, মুক্তি , চরিত্র , সত্য , আর সর্বকালের সকল মহাপুরুষকে প্রণতি।  এ বাণীগুলির  প্রথমটি এরূপ : " এই মাতৃভূমির প্রতিই আমার সারাজীবনের আনুগত্য ; এবং আমাকে যদি সহস্রবার জন্মগ্রহণ করিতে হয় , তবে সেই সহস্র জীবনের প্রতি মুহূর্ত আমার স্বদেশবাসীর , হে আমার বন্ধুবর্গ - তোমাদেরই সেবায় ব্যাতিত হইবে !" 
[ নবনীদার ইচ্ছানুরূপ ২৪ বর্ষ আগে ৪ মার্চ ১৯৯৬ ত এর প্রথম হিন্দি অনুবাদ কমপ্লিট হচ্ছিলো  ]


" Almorar Akarshan "    

Covid-19 lock-down : 13 th April 2020                                                                                                                     
---------------------------------------
আলমোড়ার আকর্ষণ :  अल्मोड़ा का आकर्षण : Attractions of Almora : 
শ্রী নবনীহরন মুখোপাধ্যায়  / श्री नवनीहरन मुखोपाध्याय/ Shri Navniharan Mukhopadhyay/অখিল ভারত বিবেকানন্দ যুব মহামন্ডল/ अखिल भारत विवेकानन्द युवा महामण्डल/ Akhil Bharat Vivekananda Yuva Mahamandal. /
প্রকাশক : प्रकाशक : Publisher:/ শ্রী তনুলাল পাল, সহ-সভাপতি , অখিল ভারত বিবেকানন্দ যুব মাহামণ্ডল, 'ভুবন -ভবন ', পো: বলরাম ধর্মসোপান, খড়দহ , উঃ ২৪ পরগনা , পশ্চিমবঙ্গ ,৭৪৩১২১/ श्री तनुलाल पाल, उपाध्यक्ष, अखिल भारत विवेकानन्द युवा महामण्डल, 'भुवन-भवन', पो: बलराम धर्मसापान, खड़दह, उत्तर- 24 परगना, पश्चिम बंगाल-743121 / Shri Tanulal Pal, Vice-President, Akhil Bharat Vivekananda Yuva Mahamandal, 'Bhuban-Bhavan', Po Balram Dharmasapan, Khardaha, North -24 Parganas , West Bengal-743121 
প্রকাশ : পৌষ , ১৪০২, December 1995/ प्रथम प्रकाश : पौष बंगाब्द 1402, दिसम्बर -1995 /
Published- December 1995/ প্রাপ্তিস্থান : उपलब्धता: Provenance/ মহামণ্ডল শহর কার্যালয়, महामण्डल का सिटी ऑफिस, कोलकाता -9, City Office of Mahamandal/শ্রীরামকৃষ্ণ কুটির , আলমোড়া , উত্তর প্রদেশ /श्री रामकृष्ण कुटीर, अल्मोड़ा, उत्तर प्रदेश/  Sri Ramakrishna Cottage, Almora, Uttar Pradesh/  মুদ্রক : मुद्रक: Printer/ The Pelican Press, কম্পিউটার টাইপসেটের ও অফসেট প্রিন্টার , ৮৫, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিট , কলকাতা/ 85, बिपिन बिहारी गांगुली स्ट्रीट, कोलकाता।
85, Bipin Bihari Ganguly Street, Kolkata.              

गुरुवार, 9 अप्रैल 2020

🔱🙏 प्रबुद्ध भारत : पुनर्जन्म से सम्बंधित चालीस प्रश्नों के उत्तर 🔱🙏 [ 'ब्रह्मविद भारत' - Enlightened India]🔱🙏

 पुनर्जन्म से सम्बंधित चालीस प्रश्नों के  उत्तर 

लम्बे समय तक प्रबुद्ध भारत पत्रिका का संपादन मायावती अद्वैत आश्रम  से किया गया। अब इस पत्रिका का प्रकाशन बेलुर मठ कोलकाता से किया जाता है पर सम्पादकीय कार्य आज भी मायावती आश्रम से ही किया जाता है। स्वामी विवेकानन्द जी की प्रेरणा से वर्ष 1896 में " प्रबुद्ध भारत " पत्रिका का प्रकाशन किया गया। पत्रिका में धर्म, दर्शनशास्त्र, कला, विज्ञान, सामाजिक प्रथाएं तथा जनहित से संबंधित लेख आदि प्रकाशित किए जाते हैं। आपके विचारार्थ यहाँ  पुनर्जन्म से सम्बंधित चालीस प्रश्नों को उत्तर सहित संकलित किया है,जो आपकी जिज्ञासा को शांत करेंगे !!

(1) प्रश्न :- पुनर्जन्म किसको कहते हैं ?

उत्तर :- जब जीवात्मा एक शरीर का त्याग करके किसी दूसरे शरीर में जाती है तो इस बार बार जन्म लेने की क्रिया को पुनर्जन्म कहते हैं ।

(2) प्रश्न :- पुनर्जन्म क्यों होता है ?

उत्तर :- जब एक जन्म के अच्छे बुरे कर्मों के फल अधुरे रह जाते हैं तो उनको भोगने के लिए दूसरे जन्म आवश्यक हैं ।

(3) प्रश्न :- अच्छे बुरे कर्मों का फल एक ही जन्म में क्यों नहीं मिल जाता ? एक में ही सब निपट जाये तो कितना अच्छा हो ?

उत्तर :- नहीं जब एक जन्म में कर्मों का फल शेष रह जाए तो उसे भोगने के लिए दूसरे जन्म अपेक्षित होते हैं ।

(4) प्रश्न :- पुनर्जन्म को कैसे समझा जा सकता है ?

उत्तर :- पुनर्जन्म को समझने के लिए जीवन और मृत्यु को समझना आवश्यक है । और जीवन मृत्यु को समझने के लिए शरीर को समझना आवश्यक है ।

(5) प्रश्न :- शरीर के बारे में समझाएँ ?

उत्तर :- हमारे शरीर को निर्माण प्रकृति से हुआ है । जिसमें मूल प्रकृति ( सत्व रजस और तमस) से प्रथम बुद्धि तत्व [महत तत्व ] का निर्माण हुआ है । बुद्धि से अहंकार ( बुद्धि का आभामण्डल ) । अहंकार से पांच ज्ञानेन्द्रियाँ ( चक्षु, जिह्वा, नासिका, त्वचा, श्रोत्र ), मन । पांच कर्मेन्द्रियाँ ( हस्त, पाद, उपस्थ, पायु, वाक् )। शरीर की रचना को मुख्यतः दो भागों में बाँटा जाता है ( सूक्ष्म शरीर और स्थूल शरीर ) ।

(6) प्रश्न :- सूक्ष्म शरीर किसको बोलते हैं ?

उत्तर :- सूक्ष्म शरीर में बुद्धि, अहंकार, मन, ज्ञानेन्द्रियाँ । ये सूक्ष्म शरीर आत्मा को सृष्टि के आरम्भ में जो मिलता है वही एक ही सूक्ष्म शरीर सृष्टि के अंत तक उस आत्मा के साथ पूरे एक सृष्टि काल ( ४३२००००००० वर्ष ) तक चलता है । और यदि बीच में ही किसी जन्म में कहीं आत्मा का मोक्ष हो जाए तो ये सूक्ष्म शरीर भी प्रकृति में वहीं लीन हो जायेगा

(7) प्रश्न :- स्थूल शरीर किसको कहते हैं ?

उत्तर :- पंच कर्मेन्द्रियाँ ( हस्त, पाद, उपस्थ, पायु, वाक् ) , ये समस्त पंचभौतिक बाहरी शरीर ।

(8) प्रश्न :- जन्म क्या होता है ?

उत्तर :- जीवात्मा का अपने करणों ( सूक्ष्म शरीर ) के साथ किसी पंचभौतिक शरीर में आ जाना ही जन्म कहलाता है ।

(9) प्रश्न :- मृत्यु क्या होती है ?

उत्तर :- जब जीवात्मा का अपने पंचभौतिक स्थूल शरीर से वियोग हो जाता है, तो उसे ही मृत्यु कहा जाता है । परन्तु मृत्यु केवल सथूल शरीर की होती है , सूक्ष्म शरीर की नहीं । सूक्ष्म शरीर भी छूट गया तो वह मोक्ष कहलाएगा मृत्यु नहीं । मृत्यु केवल शरीर बदलने की प्रक्रिया है, जैसे मनुष्य कपड़े बदलता है । वैसे ही आत्मा शरीर भी बदलता है

(10) प्रश्न :- मृत्यु होती ही क्यों है ?

उत्तर :- जैसे किसी एक वस्तु का निरन्तर प्रयोग करते रहने से उस वस्तु का सामर्थ्य घट जाता है, और उस वस्तु को बदलना आवश्यक हो जाता है, ठीक वैसे ही एक शरीर का सामर्थ्य भी घट जाता है और इन्द्रियाँ निर्बल हो जाती हैं । जिस कारण उस शरीर को बदलने की प्रक्रिया का नाम ही मृत्यु है ।

(11) प्रश्न :- मृत्यु न होती तो क्या होता ?

उत्तर :- तो बहुत अव्यवस्था होती । पृथ्वी की जनसंख्या बहुत बढ़ जाती । और यहाँ पैर धरने का भी स्थान न होता ।

(12) प्रश्न :- क्या मृत्यु होना बुरी बात है ?

उत्तर :- नहीं, मृत्यु होना कोई बुरी बात नहीं ये तो एक प्रक्रिया है शरीर परिवर्तन की ।

(13) प्रश्न :- यदि मृत्यु होना बुरी बात नहीं है तो लोग इससे इतना डरते क्यों हैं ?

उत्तर :- क्योंकि उनको मृत्यु के वैज्ञानिक स्वरूप की जानकारी नहीं है । वे अज्ञानी हैं । वे समझते हैं कि मृत्यु के समय बहुत कष्ट होता है । उन्होंने वेद, उपनिषद, या गीता के चौथे अध्याय को कभी पढ़ा नहीं वे ही अंधकार में पड़ते हैं और मृत्यु से पहले कई बार मरते हैं ।

(14) प्रश्न :- तो मृत्यु के समय कैसा लगता है ? थोड़ा सा तो बतायें ?

उत्तर :- जब आप बिस्तर में लेटे लेटे नींद में जाने लगते हैं तो आपको कैसा लगता है ?? ठीक वैसा ही मृत्यु की अवस्था में जाने में लगता है उसके बाद कुछ अनुभव नहीं होता । जब आपकी मृत्यु किसी हादसे से होती है तो उस समय आपको मूर्छा आने लगती है, आप ज्ञान शून्य होने लगते हैं जिससे की आपको कोई पीड़ा न हो । तो यही ईश्वर की सबसे बड़ी कृपा है कि मृत्यु के समय मनुष्य ज्ञान शून्य होने लगता है और सुषुुप्तावस्था में जाने लगता है

(15) प्रश्न :- मृत्यु के डर को दूर करने के लिए क्या करें ?

उत्तर :- इसके दो उपाय हैं। पहला आप जब वैदिक आर्ष ग्रन्थ ( ब्रह्मसूत्र , उपनिषद, गीता आदि ) का गम्भीरता से अध्ययन करके जीवन, मृत्यु, शरीर, आदि के विज्ञान को जानेंगे तो आपके अन्दर का, मृत्यु के प्रति भय मिटता चला जायेगा।  और दूसरा ये की महामण्डल के 'विवेकानन्द -कैप्टन सेवियर Be and Make वेदान्त लीडरशिप ट्रेनिंग परम्परा' में आयोजित युवा प्रशिक्षण शिविर में भाग लेकर, महामण्डल के (C -In -C) नवनीदा द्वारा निर्देशित 3H विकास के 5 अभ्यास : " प्रार्थना, मनःसंयोग, व्यायाम, स्वाध्याय और विवेक-प्रयोग" के  योग मार्ग पर चलें तो स्वंय ही आपका अज्ञान कमतर होता जायेगा और मृत्यु भय दूर हो जायेगा । आप निडर हो जायेंगे।
          जैसे हमारे बलिदानियों -[भगत सिंह, राजगुरु , शुकदेव और चन्द्रशेखर आजाद आदि] की गाथायें आपने सुनी होंगी जो राष्ट्र की रक्षा के लिये बलिदान हो गये । तो आपको क्या लगता है कि क्या वो ऐसे ही एक दिन में बलिदान देने को तैय्यार हो गये थे ? नहीं उन्होने भी पतंजलि योगदर्शन, गीता, उपनिषद, साँख्य, ब्रह्मसूत्र, आदि पढ़कर ही निर्भयता को प्राप्त किया था । योग मार्ग को जीया था, अज्ञानता का नाश किया था । 
            महाभारत के युद्ध में भी जब अर्जुन भीष्म, द्रोणादिकों की मृत्यु के भय से युद्ध की मंशा को त्याग बैठा था तो योगेश्वर कृष्ण ने गीता के चौथे अध्याय में अर्जुन को इसी सांख्य, योग, निष्काम कर्मों के सिद्धान्त के माध्यम से जीवन मृत्यु का ही तो रहस्य समझाया था।  और यह बताया कि शरीर तो मरणधर्मा है ही तो उसी शरीर के विज्ञान (3H) को जानकर ही अर्जुन भयमुक्त हुआ । तो इसी कारण तो वेदादि ग्रन्थों का स्वाध्याय करने वाल मनुष्य ही राष्ट्र के लिए अपना शीश कटा सकता है, वह मृत्यु से भयभीत नहीं होता , प्रसन्नता पूर्वक मृत्यु को आलिंगन करता है ।

(16) प्रश्न :- किन किन कारणों से पुनर्जन्म होता है ?

उत्तर :- आत्मा का स्वभाव है कर्म करना, किसी भी क्षण आत्मा कर्म किए बिना रह ही नहीं सकता । वे कर्म अच्छे करे या फिर बुरे, ये उसपर निर्भर है, पर कर्म करेगा अवश्य । तो ये कर्मों के कारण ही आत्मा का पुनर्जन्म होता है । पुनर्जन्म के लिए आत्मा सर्वथा ईश्वराधीन है ।

(17) प्रश्न :- पुनर्जन्म कब कब नहीं होता ?

उत्तर :- जब आत्मा का मोक्ष हो जाता है - अर्थात जब कोई ब्रह्मविद बन जाता है, तब वह भ्रममुक्त या De -Hypnotized हो जाता है, वह समझ जाता है कि मैं भेंड़ नहीं सिंहशावक हूँ ! इस अनुभव या आत्मसाक्षात्कार हो जाने के बाद उसका पुनर्जन्म नहीं होता है। [किन्तु यह भी उसकी और गुरु -माँ जगदम्बा की इच्छा पर निर्भर करता है। ]

(18) प्रश्न :- मोक्ष होने पर पुनर्जन्म क्यों नहीं होता ?

उत्तर :- क्योंकि मोक्ष होने पर स्थूल शरीर तो पंचतत्वों में लीन हो ही जाता है, पर सूक्ष्म शरीर (कारण शरीर) जो आत्मा (माँ जगदम्बा) के सबसे निकट होता है, वह भी अपने मूल कारण प्रकृति (माँ जगदम्बा) में लीन हो जाता है ।

(19) प्रश्न :- मोक्ष के बाद क्या कभी भी आत्मा का पुनर्जन्म नहीं होता ?

उत्तर :- मोक्ष की अवधि तक आत्मा का पुनर्जन्म नहीं होता । उसके बाद होता है ।

(20) प्रश्न :- लेकिन मोक्ष तो सदा के लिए होता है, तो फिर मोक्ष की एक निश्चित अवधि कैसे हो सकती है ?

उत्तर :- सीमित कर्मों का कभी असीमित फल नहीं होता । यौगिक दिव्य कर्मों का फल हमें ईश्वरीय आनन्द के रूप में मिलता है, और जब ये मोक्ष की अवधि समाप्त होती है तो दुबारा से ये आत्मा शरीर धारण करती है ।

(21) प्रश्न :- मोक्ष की अवधि कब तक होती है ?

उत्तर :- मोक्ष का समय ३१ नील १० खरब ४० अरब वर्ष है, जब तक आत्मा मुक्त अवस्था में रहती है ।

(22) प्रश्न :- मोक्ष की अवस्था में स्थूल शरीर या सूक्ष्म शरीर आत्मा के साथ रहता है या नहीं ?

उत्तर :- नहीं मोक्ष की अवस्था में आत्मा पूरे ब्रह्माण्ड का चक्कर लगाता रहता है और ईश्वर के आनन्द में रहता है, बिलकुल ठीक वैसे ही जैसे कि मछली पूरे समुद्र में रहती है । और जीव को किसी भी शरीर की आवश्यक्ता ही नहीं होती।

(23) प्रश्न :- मोक्ष के बाद आत्मा को शरीर कैसे प्राप्त होता है ?

उत्तर :- सबसे पहला तो आत्मा को कल्प के आरम्भ ( सृष्टि आरम्भ ) में सूक्ष्म शरीर मिलता है फिर ईश्वरीय मार्ग और औषधियों की सहायता से प्रथम रूप में अमैथुनी जीव शरीर मिलता है, वो शरीर सर्वश्रेष्ठ मनुष्य या विद्वान का होता है जो कि मोक्ष रूपी पुण्य को भोगने के बाद आत्मा को मिला है । जैसे इस वाली सृष्टि के आरम्भ में चारों ऋषि विद्वान ( वायु , आदित्य, अग्नि , अंगिरा ) को मिला जिनको वेद के ज्ञान से ईश्वर ने अलंकारित किया । क्योंकि ये ही वो पुण्य आत्मायें थीं जो मोक्ष की अवधि पूरी करके आई थीं ।

(24) प्रश्न :- मोक्ष की अवधि पूरी करके आत्मा को मनुष्य शरीर ही मिलता है या जानवर का ?

उत्तर :- मनुष्य शरीर ही मिलता है ।

(25) प्रश्न :- क्यों केवल मनुष्य का ही शरीर क्यों मिलता है ? जानवर का क्यों नहीं ?

उत्तर :- क्योंकि मोक्ष को भोगने के बाद पुण्य कर्मों को तो भोग लिया , और इस मोक्ष की अवधि में पाप कोई किया ही नहीं तो फिर जानवर बनना सम्भव ही नहीं , तो रहा केवल मनुष्य जन्म जो कि कर्म शून्य आत्मा को मिल जाता है ।

(26) प्रश्न :- मोक्ष होने से पुनर्जन्म क्यों बन्द हो जाता है ?

उत्तर :- क्योंकि योगाभ्यास आदि साधनों से जितने भी पूर्व कर्म होते हैं ( अच्छे या बुरे ) वे सब कट जाते हैं । तो ये कर्म ही तो पुनर्जन्म का कारण हैं, कर्म ही न रहे तो पुनर्जन्म क्यों होगा ??

(27) प्रश्न :- पुनर्जन्म से छूटने का उपाय क्या है ?

उत्तर :- पुनर्जन्म से छूटने का उपाय है योग मार्ग से मुक्ति या मोक्ष का प्राप्त करना ।

(28) प्रश्न :- पुनर्जन्म में शरीर किस आधार पर मिलता है ?

उत्तर :- जिस प्रकार के कर्म आपने एक जन्म में किए हैं उन कर्मों के आधार पर ही आपको पुनर्जन्म में शरीर मिलेगा ।

(29) प्रश्न :- कर्म कितने प्रकार के होते हैं ?

उत्तर :- मुख्य रूप से कर्मों को तीन भागों में बाँटा गया है :- सात्विक कर्म , राजसिक कर्म , तामसिक कर्म ।
(१) सात्विक कर्म :- सत्यभाषण, विद्याध्ययन, परोपकार, दान, दया, सेवा आदि ।

(२) राजसिक कर्म :- मिथ्याभाषण, क्रीडा, स्वाद लोलुपता, स्त्रीआकर्षण, चलचित्र आदि ।

(३) तामसिक कर्म :- चोरी, जारी, जूआ, ठग्गी, लूट मार, अधिकार हनन आदि ।

और जो कर्म इन तीनों से बाहर हैं वे दिव्य कर्म कलाते हैं, जो कि ऋषियों और योगियों द्वारा किए जाते हैं । इसी कारण उनको हम तीनों गुणों से परे मानते हैं । जो कि ईश्वर के निकट होते हैं और दिव्य कर्म ही करते हैं ।

(30) प्रश्न :- किस प्रकार के कर्म करने से मनुष्य योनि प्राप्त होती है ?

उत्तर :- सात्विक और राजसिक कर्मों के मिलेजुले प्रभाव से मानव देह मिलती है , यदि सात्विक कर्म बहुत कम है और राजसिक अधिक तो मानव शरीर तो प्राप्त होगा परन्तु किसी नीच कुल में , यदि सात्विक गुणों का अनुपात बढ़ता जाएगा तो मानव कुल उच्च ही होता जायेगा । जिसने अत्यधिक सात्विक कर्म किए होंगे वो विद्वान मनुष्य के घर ही जन्म लेगा ।

(31) प्रश्न :- किस प्रकार के कर्म करने से आत्मा जीव जन्तुओं के शरीर को प्राप्त होता है ?

उत्तर :- तामसिक और राजसिक कर्मों के फलरूप जानवर शरीर आत्मा को मिलता है । जितना तामसिक कर्म अधिक किए होंगे उतनी ही नीच योनि उस आत्मा को प्राप्त होती चली जाती है । जैसे लड़ाई स्वभाव वाले , माँस खाने वाले को कुत्ता, गीदड़, सिंह, सियार आदि का शरीर मिल सकता है , और घोर तामसिक कर्म किए हुए को साँप, नेवला, बिच्छू, कीड़ा, काकरोच, छिपकली आदि । तो ऐसे ही कर्मों से नीच शरीर मिलते हैं और ये जानवरों के शरीर आत्मा की भोग योनियाँ हैं

(32) प्रश्न :- तो क्या हमें यह पता लग सकता है कि हम पिछले जन्म में क्या थे ? या आगे क्या होंगे ?

उत्तर :- नहीं कभी नहीं, सामान्य मनुष्य को यह पता नहीं लग सकता । क्योंकि यह केवल ईश्वर का ही अधिकार है कि हमें हमारे कर्मों के आधार पर शरीर दे । वही सब जानता है

(33) प्रश्न :- तो फिर यह किसको पता चल सकता है ?

उत्तर :- केवल एक सिद्ध योगी ही यह जान सकता है , योगाभ्यास से उसकी बुद्धि । अत्यन्त तीव्र हो चुकी होती है कि वह ब्रह्माण्ड एवं प्रकृति के महत्वपूर्ण रहस्य़ अपनी योगज शक्ति से जान सकता है । उस योगी को बाह्य इन्द्रियों से ज्ञान प्राप्त करने की आवश्यकता नहीं रहती है
वह अन्तः मन और बुद्धि से सब जान लेता है । उसके सामने भूत और भविष्य दोनों सामने आ खड़े होते हैं।

(34) प्रश्न :- यह बतायें की योगी यह सब कैसे जान लेता है ?

उत्तर :- अभी यह लेख पुनर्जन्म पर है, यहीं से प्रश्न उत्तर का ये क्रम चला देंगे तो लेख का बहुत ही विस्तार हो जायेगा । इसीलिये हम अगले लेख में यह विषय विस्तार से समझायेंगे कि योगी कैसे अपनी विकसित शक्तियों से सब कुछ जान लेता है ? और वे शक्तियाँ कौन सी हैं ? कैसे प्राप्त होती हैं ? इसके लिए अगले लेख की प्रतीक्षा करें...

(35) प्रश्न :- क्या पुनर्जन्म के कोई प्रमाण हैं ?

उत्तर :- हाँ हैं, जब किसी छोटे बच्चे को देखो तो वह अपनी माता के स्तन से सीधा ही दूध पीने लगता है जो कि उसको बिना सिखाए आ जाता है क्योंकि ये उसका अनुभव पिछले जन्म में दूध पीने का रहा है, वर्ना बिना किसी कारण के ऐसा हो नहीं सकता । दूसरा यह कि कभी आप उसको कमरे में अकेला लेटा दो तो वो कभी कभी हँसता भी है , ये सब पुराने शरीर की बातों को याद करके वो हँसता है पर जैसे जैसे वो बड़ा होने लगता है तो धीरे धीरे सब भूल जाता है...!

(36) प्रश्न :- क्या इस पुनर्जन्म को सिद्ध करने के लिए कोई उदाहरण हैं...?

उत्तर :- हाँ, जैसे अनेकों समाचार पत्रों में, या TV में भी आप सुनते हैं कि एक छोटा सा बालक अपने पिछले जन्म की घटनाओं को याद रखे हुए है, और सारी बातें बताता है जहाँ जिस गाँव में वो पैदा हुआ, जहाँ उसका घर था, जहाँ पर वो मरा था । और इस जन्म में वह अपने उस गाँव में कभी गया तक नहीं था लेकिन फिर भी अपने उस गाँव की सारी बातें याद रखे हुए है , किसी ने उसको कुछ बताया नहीं, सिखाया नहीं, दूर दूर तक उसका उस गाँव से इस जन्म में कोई नाता नहीं है । फिर भी उसकी गुप्त बुद्धि जो कि सूक्ष्म शरीर का भाग है वह घटनाएँ संजोए हुए है जाग्रत हो गई और बालक पुराने जन्म की बातें बताने लग पड़ा...!

(37) प्रश्न :- लेकिन ये सब मनघड़ंत बातें हैं, हम विज्ञान के युग में इसको नहीं मान सकते क्योंकि वैज्ञानिक रूप से ये बातें बेकार सिद्ध होती हैं, क्या कोई तार्किक और वैज्ञानिक आधार है इन बातों को सिद्ध करने का ?

उत्तर :- आपको किसने कहा कि हम विज्ञान के विरुद्ध इस पुनर्जन्म के सिद्धान्त का दावा करेंगे । ये वैज्ञानिक रूप से सत्य है , और आपको ये हम अभी सिद्ध करके दिखाते हैं..!

(38) प्रश्न :- तो सिद्ध कीजीए ?

उत्तर :- जैसा कि आपको पहले बताया गया है कि मृत्यु केवल स्थूल शरीर की होती है, पर सूक्ष्म शरीर आत्मा के साथ वैसे ही आगे चलता है , तो हर जन्म के कर्मों के संस्कार उस बुद्धि में समाहित होते रहते हैं । और कभी किसी जन्म में वो कर्म अपनी वैसी ही परिस्थिती पाने के बाद जाग्रत हो जाते हैं 

इसे उदहारण से समझें :- एक बार एक छोटा सा ६ वर्ष का बालक था, यह घटना हरियाणा के सिरसा के एक गाँव की है । जिसमें उसके माता पिता उसे एक स्कूल में घुमाने लेकर गये जिसमें उसका दाखिला करवाना था और वो बच्चा केवल हरियाणवी या हिन्दी भाषा ही जानता था कोई तीसरी भाषा वो समझ तक नहीं सकता था । 

लेकिन हुआ कुछ यूँ था कि उसे स्कूल की Chemistry Lab में ले जाया गया और वहाँ जाते ही उस बच्चे का मूँह लाल हो गया !! चेहरे के हावभाव बदल गये !!

और उसने एकदम फर्राटेदार French भाषा बोलनी शुरू कर दी !! उसके माता पिता बहुत डर गये और घबरा गये , तुरंत ही बच्चे को अस्पताल ले जाया गया । जहाँ पर उसकी बातें सुनकर डाकटर ने एक दुभाषिये का प्रबन्ध किया । 

जो कि French और हिन्दी जानता था , तो उस दुभाषिए ने सारा वृतान्त उस बालक से पूछा तो उस बालक ने बताया कि " मेरा नाम Simon Glaskey है और मैं French Chemist हूँ । मेरी मौत मेरी प्रयोगशाला में एक हादसे के कारण ( Lab. ) में हुई थी । "

तो यहाँ देखने की बात यह है कि इस जन्म में उसे पुरानी घटना के अनुकूल मिलती जुलती परिस्थिति से अपना वह सब याद आया जो कि उसकी गुप्त बुद्धि में दबा हुआ था । यानि की वही पुराने जन्म में उसके साथ जो प्रयोगशाला में हुआ, वैसी ही प्रयोगशाला उस दूसरे जन्म में देखने पर उसे सब याद आया । तो ऐसे ही बहुत सी उदहारणों से आप पुनर्जन्म को वैज्ञानिक रूप से सिद्ध कर सकते हो...!

(39) प्रश्न :- तो ये घटनाएँ भारत में ही क्यों होती हैं ? पूरा विश्व इसको मान्यता क्यों नहीं देता ?

उत्तर :- ये घटनायें पूरे विश्व भर में होती रहती हैं किन्तु पाश्चात्य भोगवादी सभ्यता अभी वैदिक सभ्यता की अपेक्षा बहुत नयी है, इनको वैदिक दृष्टि से 'मनुष्य' को देखने की पद्धति नहीं ज्ञात है। योग -दर्शन के अनुसार स्वामी विवेकानन्द मनुष्य के तीन प्रमुख अवयव (components) को '3H' - शरीर (Hand) मन (Head) और ह्रदय या आत्मा (Heart) से परिभाषित करते थे। पाश्चात्य देश केवल '2H' शरीर को जानते हैं, और 'मन' के विषय में भी उनका ज्ञान आधा-अधूरा ही है। इसलिये वे केवल माँस और हड्डियों के समूह को ही शरीर समझते हैं। और उनके लिए आत्मा नाम की कोई वस्तु नहीं है । 
                तो ऐसे में उनको न जीवन का ज्ञान है, न मृत्यु का ज्ञान है, न आत्मा का ज्ञान है, न कर्मों का ज्ञान है, न ईश्वरीय व्यवस्था (कर्म के नियम) का कोई ज्ञान है । और अगर कोई पुनर्जन्म की कोई घटना उनके सामने आती भी है तो वो इसे मानसिक रोग जानकर उसको Multiple Personality Syndrome का नाम देकर अपना पीछा छुड़ा लेते हैं और उसके कथनानुसार जाँच नहीं करवाते हैं..    पाश्चात्य जगत इसको मान्यता इसलिए नहीं देता क्योंकि उनको वेदानुसार विवेकज-ज्ञान, योगज-शक्ति या यौगिक दृष्टि, से शरीर को देखने की पद्धति का कुछ भी ज्ञान नहीं है


(40) प्रश्न :- क्या पुनर्जन्म केवल पृथ्वी पर ही होता है या किसी और ग्रह पर भी ?

उत्तर :- ये पुनर्जन्म पूरे ब्रह्माण्ड में यत्र -तत्र होता है, कितने असंख्य सौरमण्डल हैं, कितनी ही पृथ्वियाँ हैं । तो एक पृथीवी के जीव मरकर ब्रह्माण्ड में किसी दूसरी पृथीवी के उपर किसी न किसी शरीर में भी जन्म ले सकते हैं ।
     ये ईश्वरीय व्यवस्था के अधीन है... परन्तु यह बड़ा ही अजीब लगता है कि मान लो कोई हाथी मरकर मच्छर बनता है तो इतने बड़े हाथी की आत्मा मच्छर के शरीर में कैसे घुसेगी..? यही तो भ्रम है (Hypnotized-अवस्था है), आपका कि आत्मा जो है वो पूरे शरीर में नहीं फैली होती । वो तो हृदय के पास छोटे अणुरूप में होती है । सब जीवों की आत्मा एक सी है । चाहे वो व्हेल मछली हो, चाहे वो एक चींटी हो। 

             स्वामी विवेकानंद की इच्छानुसार अद्वैत आश्रम,मायावती अल्मोड़ा हिमालय में कोई मंदिर या मूर्ति नहीं है इसलिए यहाँ सनातनी परम्परानुरूप किसी प्रतीक की पूजा नहीं होती। सांय काल मधुर वाणी में सामूहिक रूप से संगीत वाद्यों के साथ राम नाम संकीर्तन होता है। 1903 ई.   में यहाँ एक धर्मार्थ रूग्णालय की स्थापना की गई, जिसमें गरीबों की निशुल्क चिकित्सा की जाती है। यहाँ की गौशाला में अच्छी नस्ल की स्वस्थ्य गायें हैं, यात्रीगण इनके शुद्ध, ढूध का रसास्वादन प्रात: नाश्ते के समय और रात्रि भोजन के उपरांत ले सकते हैं।आश्रम में १९०१ में स्थापित एक छोटा पुस्तकालय भी है, जिसमें अध्यात्म व् दर्शन सहित अनेक विषयों से सम्बद्ध पुस्तकें संकलित हैं। आश्रम से लगभग दो सो मीटर दूर एक छोटी अतिथिशाला भी है, जहां बाहर से आने वाले साधकों के ठहरने की व्यवस्था है।
                  स्वामी जी के अल्मोड़ा प्रवास का साक्ष थाम्पसन हाउस भी है। अब यहां एक सरकारी कार्यालय है। अल्मोड़ा बाजार में एक निजी भवन में स्वामी जी ने दो बार प्रवास किया था। इस भवन के मालिक स्वामी जी के अभिन्न मित्र श्री बद्रीशाह थे, जिनके आतिथ्य में स्वामी जी अल्मोड़ा में रहते थे। स्वामी जी ने इस भवन में 1898 में निवास किया था। स्वामी जी की शिष्या भगनी निवेदिता के प्रवास स्थल ओकले हाउस का नाम बदल कर अब निवेदिता काटेज कर दिया गया है। उल्लेखनीय है कि 1916 में स्वामी विवेकानंद के शिष्यों स्वामी तुरियानंद और स्वामी शिवानंद ने अल्मोड़ा में ब्राइटएंड कार्नर पर एक केंद्र की स्थापना कराई। जो आज रामकृष्ण कुटीर नाम से जाना जाता है।   देहरादून से स्वामी विवेकानन्द ऋषिकेश गए। ऋषिकेश में स्वामी विवेकानन्द  कैलाश आश्रम (B.B.Panda)  एवं केवलानन्द आश्रम गये , यहाँ स्वामी विवेकानंद ने चंद्रेश्वर महादेव गुफा मंदिर में ध्यान किया। फिर देहरादून से वे सहारनपुर (मेरे कुम्भ मेला 1986 के मार्गदर्शक संन्यासी) व मेरठ चले गए।
-----------------